সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী ও গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহে জালিয়াতির মাধ্যমে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার দুই বছর পর অভ্যন্তরীণ অডিটে বিষয়টি ধরা পড়ায় নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম। তবে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ার পরপরই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে ঘটনার সাথে জড়িতসহ খাদ্য ব্যবসায়ী একাধিক চক্র।
তাড়াশ খাদ্যগুদাম সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৭৪ টন। সে অনুযায়ী যথারীতি লক্ষমাত্রা অনুসারে আমন সংগ্রহ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু গোল বাধে আরো অতিরিক্ত দেড়শ টন আমন সংগ্রহ নিয়ে।
সূত্র আরো জানায়, সে সময় তাড়াশ খাদ্যগুদামে কর্মরত (বর্তমানে পদ অবনমন হয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার খাদ্যগুদামে খাদ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমান, নিরাপত্তাকর্মী ফারুক মোল্লা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ইয়াসিন আলী ও স্থানীয় একটি খাদ্য ব্যবসায়ীচক্র মিলে বিধিবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ৫০ জন কৃষকের বিপরীতে দেড়শ টন আমন সংগ্রহ দেখান।
কিন্তু বাস্তবে তারা কোনো ধান সংগ্রহ না করেই প্রতি টন ২৭ হাজার টাকা দরে মোট ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা থেকে তুলে নেন।
এছাড়া তাড়াশ খাদ্যগুদামের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে গতবছর ৭ নভেম্বর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত চলমান রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ও উপজেলা খাদ্যগুদামের একাধিক সূত্র জানায়, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়াই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইয়াসিন আলী অতিরিক্ত দেড়শ টন আমনের পুনর্ভরণ বিলের জন্য চিঠি দিলেও তিনি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর করেননি।
ইয়াসিন আলীর দাবি, তিনি চিঠি দিয়ে ভুল করলেও চেকে কোনো স্বাক্ষর করেননি। তবে এত মোটা অংকের বিলের একটি চেক বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই ছাড়াই টাকা ছাড়ল এটাও এক প্রশ্ন তার কাছে।
এ প্রসঙ্গে সরেজমিন তাড়াশ জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইব্রাহীম হোসেন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পুরাতন বিষয় বলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান মুহাম্মদ তানভীর রহমানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এরপর তার নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য মো. নিয়ামুল হক বলেন, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছি। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, এলএসডি) কাওছার রহমানের কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
টিএইচ